প্রজাতন্ত্র দিবস হলো একটি জাতীয় উৎসব, যা একটি দেশের সংবিধান কার্যকর হওয়ার দিনটিকে উদ্যাপন করার জন্য পালন করা হয়। ভারতের ক্ষেত্রে, প্রজাতন্ত্র দিবস (Republic Day ) প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি তারিখে উদ্যাপিত হয়। ১৯৫০ সালের এই দিনে ভারতের সংবিধান কার্যকর হয় এবং ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রজাতান্ত্রিক দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই দিনে দেশজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, যেমন কুচকাওয়াজ, জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। দিল্লির রাজপথে আয়োজিত কুচকাওয়াজ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যেখানে দেশের সামরিক শক্তি, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়।
ভারতে ২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস পালন করা হয় কারণ এই দিনে, ১৯৫০ সালে ভারতের সংবিধান কার্যকর হয়েছিল এবং দেশটি একটি প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।
এর পেছনের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট হলো:
1. সংবিধানের গঠন:
১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর, ভারতকে একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার জন্য একটি সংবিধান প্রণয়নের প্রয়োজন ছিল। ১৯৪৬ সালে সংবিধান সভা গঠন করা হয় এবং ড. বি.আর. আম্বেদকরের নেতৃত্বে সংবিধান প্রণয়ন শুরু হয়।
2. সংবিধান গ্রহণ এবং কার্যকর:
ভারতের সংবিধান ১৯৪৯ সালের ২৬শে নভেম্বর সংবিধান সভা দ্বারা গ্রহণ করা হয়। তবে এটি কার্যকর হয় ১৯৫০ সালের ২৬শে জানুয়ারি।
3. ২৬শে জানুয়ারির ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
১৯২৯ সালের লাহোর অধিবেশনে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ (পূর্ণ স্বাধীনতা) ঘোষণা করেছিল। ২৬শে জানুয়ারি, ১৯৩০ সালকে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই কারণেই ২৬শে জানুয়ারি তারিখটি প্রতীকী গুরুত্ব বহন করে।
ফলে, ১৯৫০ সালের এই দিনটি ভারতের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল। এই দিনটি উদ্যাপন করে দেশের নাগরিকদের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
26 শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস বক্তব্য
২৬শে জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস বক্তব্য (উদাহরণ):
সুপ্রিয় অতিথি, শিক্ষকমণ্ডলী এবং আমার প্রিয় বন্ধুগণ,
আজ আমরা এখানে একটি অত্যন্ত গর্বিত উপলক্ষ উদ্যাপন করতে একত্রিত হয়েছি। আজ ২৬শে জানুয়ারি, আমাদের প্রজাতন্ত্র দিবস। এটি আমাদের জাতীয় গৌরব এবং ঐক্যের প্রতীক।
১৯৫০ সালের এই দিনে আমাদের সংবিধান কার্যকর হয়েছিল এবং ভারত একটি সার্বভৌম, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। আমাদের সংবিধান শুধু একটি দলিল নয়, এটি আমাদের অধিকার, কর্তব্য এবং মূল্যবোধের প্রতীক। এটি এমন একটি দলিল যা আমাদের স্বাধীনতা এবং সাম্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়।
এই দিনে আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি ড. বি.আর. আম্বেদকর এবং সংবিধান রচয়িতাদের, যাঁরা অগণিত পরিশ্রম করে আমাদের জন্য এই শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে তুলেছিলেন। আমরা তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই, যাঁরা স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আমাদের জন্য একটি স্বাধীন জাতির স্বপ্ন দেখেছিলেন।
আজকের দিনটি কেবল উদ্যাপনের নয়, বরং নিজেদের প্রতি একটি প্রতিজ্ঞা করার দিন। আমাদের দায়িত্ব হল, এই জাতীয় ঐক্য এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সুরক্ষিত রাখা এবং আরও সমৃদ্ধ ভারত গড়ার জন্য কাজ করা।
আমাদের দেশ নানা ভাষা, সংস্কৃতি এবং ধর্মের মেলবন্ধনে গঠিত। এই বৈচিত্র্যের মধ্যেই রয়েছে আমাদের প্রকৃত শক্তি। তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশকে আরও উন্নত, শান্তিপূর্ণ এবং শক্তিশালী করে তুলতে চেষ্টা করি।
পরিশেষে, আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আমাদের সংবিধানের আদর্শগুলি মেনে চলুন এবং একজন দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করুন।
প্রজাতন্ত্র দিবস আমাদের দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় উৎসব। এটি প্রতি বছর ২৬শে জানুয়ারি তারিখে উদ্যাপিত হয়। এই দিনে আমাদের সংবিধান কার্যকর হয়েছিল এবং ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। বিদ্যালয়ে এই দিনটি অত্যন্ত শ্রদ্ধা, উৎসাহ এবং গর্বের সঙ্গে পালন করা হয়।
উদযাপনের প্রস্তুতি:
প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের জন্য আমাদের বিদ্যালয়ে কয়েকদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু হয়। স্কুল প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় এবং সাজানো হয় জাতীয় পতাকা, রঙিন ফেস্টুন ও ফুল দিয়ে। শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেমের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য রিহার্সাল করে।অনুষ্ঠানের দিন:
২৬শে জানুয়ারি সকালবেলায় সবাই পরিষ্কার পোশাক পরে বিদ্যালয়ে আসে। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তারপর প্রধান শিক্ষক বা বিশেষ অতিথি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং আমরা সবাই মিলে "জন গণ মন" গানটি গাই। পতাকা উত্তোলনের পর দেশপ্রেমমূলক গান, কবিতা আবৃত্তি, নাটক ও নাচ পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বক্তৃতা। শিক্ষার্থীরা এবং শিক্ষকেরা প্রজাতন্ত্র দিবসের তাৎপর্য এবং সংবিধানের গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য দেন। প্রধান শিক্ষক আমাদের দেশের ইতিহাস, সংবিধান ও স্বাধীনতা সংগ্রামের বীরদের ত্যাগের কথা মনে করিয়ে দেন।
উৎসাহ ও শিক্ষা:
এই দিনের উদযাপন আমাদের হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত করে। আমাদের সংবিধানের অধিকার এবং কর্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায়। এটি আমাদের দেশের ঐক্য এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের প্রতি গর্বিত করে তোলে।উপসংহার:
বিদ্যালয়ে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এটি শুধু একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং আমাদের জাতীয় গৌরবের প্রতীক। এই দিনটি আমাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা, কর্তব্য এবং ঐক্যের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়। আমরা সবাই মিলে প্রতিজ্ঞা করি, আমাদের দেশের উন্নতি ও সুরক্ষার জন্য কাজ করব।
.webp) |
76TH REPUBLIC 2025 |
জয় হিন্দ !
Every comment is reviewed
comment url