RCMS_ST_PostAd

ᱵᱟᱯᱞᱟ ᱥᱮᱨᱮᱱᱡᱮ ᱨᱮ ᱨᱟᱢᱟᱭᱟᱱ ᱨᱮᱭᱟᱜ ᱚᱨᱥᱚᱝ / বাপলা সেরেঞে রামায়ণের প্রভাব

 ᱵᱟᱯᱞᱟ ᱥᱮᱨᱮᱱᱡᱮ ᱨᱮ ᱨᱟᱢᱟᱭᱟᱱ ᱨᱮᱭᱟᱜ ᱚᱨᱥᱚᱝ

বাপলা সেরেঞে রামায়ণের প্রভাব



বাল্মীকি রচিত 'রামায়ণম্' মহাকাব্যের কাহিনী ভারতবর্ষের যে কোনো জাতির কাছেই আকর্ষণীয় ছিল। ভারতবর্ষের নানা জাতির ও নানা ধর্মের সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে এই রামায়ণের প্রভাব অমোঘ। পরবর্তীকালে কৃত্তিবাসী রামায়ণের জনপ্রিয়তার কালে বাংলাদেশের সর্বত্র রামায়ণ কাহিনী নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কথাকারদের প্রভাবে এবং রামায়ণ গায়কদের প্রভাবে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতেও রামায়ণকথা সকলের পরিচিত হয়ে ওঠে। এই সুত্রে দেখা যায় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষদের কাছেও এই রামায়ণ গাথা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সাঁওতালি দং সেরেঞে রামায়ণ কাহিনীর অংশবিশেষ বিভিন্ন গানের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত।

রামায়ণমূলক দং সেরেঞগুলি বিয়ের একটি বিশেষ পর্বে গাওয়া হয়। বিবাহ হয়ে যাওয়ার পর বরবধূকে সামনে রেখে এই ধরনের গানগুলি গাওয়া হয়। গানগুলিকে নাম দেওয়া যেতে পারে 'বউ খোঁজার গান'।একদিন কাবুল কান্দাহারের পথে সাঁওতালরা ভারতে প্রবেশ করেছিল। কিন্তু সাঁওতালরা বিভিন্ন সময়ে ভিটেমাটি ছাড়া হয়েছে। তাদের গানের মধ্যে এই ভিটে ছাড়ার দুঃখ বিভিন্ন সময় প্রকাশ পেয়েছে। রামায়ণ কাহিনীতে রামসীতা ও লক্ষ্মণের অযোধ্যা ছেড়ে চলে যাওয়ার ঘটনাটিকে সাঁওতালরা নিজেদের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে নিয়ে গান রচনা করেছেন।


যেমন-      

রামে লক্ষ্মণ হো সীতা দেবী ,চৌদ্দ বছর ক বনবাস এন। দায়াগে রাজরানি দায়াগে অযোধ্যাপুরী দায়াগে গাড় দ ক বাগী আৎদ।


বঙ্গানুবাদ

রাম লক্ষ্মণ সীতা দেবী
চৌদ্দ বছর বনবাস গিয়েছিল।
হায়রে রাজারানি হায়রে অযোধ্যাপুরী
হায়রে ভিটেমাটি ছেড়ে চলে গেল।


রামায়ণ কাহিনীটি সহজ সরলভাবে সাঁওতালি সেরেঞে স্থান পেয়েছে। সাঁওতাল জাতির সহজ, সরল মনোভাবের পরিচয়ই এই সেরেঞগুলিতে রয়েছে। রামায়ণ কাহিনীর - মধ্যে সব থেকে বেদনাদায়ক ঘটনা পঞ্চবটীর পর্ণকুটীর থেকে সীতাহরণের প্রসঙ্গটি।রাবণ দস্যুপ্রবৃত্তি নিয়ে রামসীতার সুখের নীড় ভেঙে দিয়েছে। তাদের এই শান্তির নীড় ভেঙে যাওয়ার কাহিনী রয়েছে সাঁওতালি সেরেঞে


রামে চালাও এনা হরিণী সেঁন্দেরা।
লক্ষ্মণে চালাও এনা রামে পাঁজা।
সাধু মা চিনতে জুগী মা বেশতে জুগী মা বেশতে রাবণ রাজা দ সীতা দেবী দয় হরণ কেদে।

বঙ্গানুবাদ
রাম লক্ষ্মণ সীতা দেবী পঞ্চবটী বনে আশ্রয় নিল।
রাম চলে গেল হরিণ মারতে।
লক্ষ্মণ চলে গেল রামকে খুঁজতে।
সাধু সেজে জুগী বেশে
জুগী বেশে রাবণ রাজা
সীতা দেবীকে হরণ করল।

রাম সীতার বিচ্ছেদের পর তাদের হৃদয়ের যন্ত্রণাকাতরতা, করুণ বিলাপ যে কোনো ভারতবাসীর মতো সাঁওতালদেরও স্পর্শ করেছে। রাম, সীতা ও হনুমানের মর্মস্পর্শী ক্রন্দনের চিত্র ধরা পড়েছে একটি দং সেরেঞে


অকয় দয় রাঃ এদা বীর রে? অকয় এ রাঃ এদা দাঃ লু ঘাটরে? 
অকয় এ রাঃ এদা দারে ডৗর রে? রাম এ রাঃ এদা বীররে। 
সীতা এ রাঃ এদা দাঃ লু ঘাটরে। হনুমান এ রাঃ এদা দারে ডৗর রে।
বঙ্গানুবাদ
কে বা কাঁদে বনে?
কে বা কাঁদে বাঁধের ঘাটে?
কে বা কাঁদে গাছের সরু ডাল ধরে?
রাম কাঁদে বনে,
সীতা কাঁদে বাঁধের ঘাটে?
হনু কাঁদে সরু ডালে ধরে।


রাম-সীতাকে বিচ্ছেদযন্ত্রণার দাবদাহ থেকে মুক্তি দেওয়ার পথনির্মাণ করেছিলেন সর্বপ্রথম হনুমান। সমুদ্রপার হয়ে সীতার কাছে রামের স্বর্ণাঙ্গুরীয় বয়ে নিয়ে গিয়েছিল সে সীতার কাছে স্বর্ণদিনের বার্তাবহ ছিল হনুমানই। এই বিষয়ে একটি সেরেঞ হল

তি রেনাঃ সনের মুদৗম অকারেনা সিতাম ঞাম আনা রে।-সাত সমুদ্র লঙ্কা গড় পারম রে হনুমান বীর গেয় চাল আদিঞ আয়।
বঙ্গানুবাদ
 হাতের সোনার আংটি কোথায় পেলি সীতা। সাত সমুদ্র পার করে লঙ্কা রাজ্যে এসে হনুমান বীর দিয়ে গেল আমাকে।

বাল্মীকি রামায়ণে সীতার জন্মবিষয়ক যে তথ্য দেওয়া হয়েছে সাঁওতালি সেরেঞে তাকেই মান্য করা হয়েছে। রামায়ণের আদিকাণ্ডের ৬৬ সর্গে লেখা হয়েছে-
অথ মে কৃষতঃ ক্ষেত্রং লাঙ্গলাদুখিতা ততঃ।। ক্ষেত্রং শোধয়তা লব্ধা নাম্না সীতেতি বিশ্রুতা।
('রামায়ণম'-বাল্মীকি; ধ্যানেশনারায়ণ চক্রবর্তী সম্পাদিত; নিউলাইট, প্রথম সংস্করণ
১৯৯৬, পৃ-১৪২, শ্লোক-১৩-১৪)
অর্থাৎ, লাঙ্গল দিয়ে আমি (জনক) যখন কৃষিক্ষেত্র কর্ষণ করছিলাম ক্ষেত্র শোধন করার সময় লাঙ্গলের অগ্রভাগ থেকে একটি কন্যকা উঠে এল। সীতা নামে সে পরিচিত।




সাঁওতালি দং সেরেঞে বাল্মীকির বর্ণনাকেই মান্য করা হয়েছে

সীতায় জানাম লেনা নাহেল গাডারে। রামে তিঙ্গুয়েনা ছাতা দারে রাম রাজায় গণ্ডী রাম রাজায় গণ্ডী। রাবণ রাজা সীতায় হরণ লেদে।।

 বঙ্গানুবাদ

 সীতার জন্ম হয় লাঙলের ফালে রাম সীতাকে বিয়ে করে। রাম রাজা গণ্ডী দিয়েছিল। রাবণ রাজা সীতাকে হরণ করে নিল।


সাঁওতালি বহু সেরেঞেই রামায়ণনির্ভর নানা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়। বলা যায় এই বিষয়ে ধারাবাহিক গান রচিত হয়েছিল একসময় কালপ্রভাবে তার অনেকগুলিই বিলীন হয়ে গিয়েছে। তবে বাপলা সেরেঞে এখনও বেশ কিছু রামায়ণমূলক গান চর্চিত হয়।
সাঁওতালি সেরেঞে রামায়ণের এই প্রভাব থেকে বোঝা যায় হিন্দু ঐতিহ্যকে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কোনো রকম সংকোচ তাদের ছিল না। আদিবাসীদের বৃহত্তর হিন্দু ঐতিহ্য গ্রহণ করার মানসিকতা সম্পর্কে নির্মলকুমার বসু তাঁর 'Hindu Method of Tribal Absorption' গ্রন্থে লিখেছেন যে ওঁরাও আদিবাসীদের এক বিশেষ উৎসব 'মাণ্ডা পরব' উদযাপন উপলক্ষে বৈষ্ণব গোঁসাইদের কাছে পৈতে গ্রহণ এবং কয়েকদিন শুদ্ধাচারে থাকার জন্য নির্দেশ গ্রহণ করে থাকে। তিনি লিখেছেন-
"...during the term of the ceremony, the Ornons and the Mundas virtually live the life of pure Hindu devotee"
(ঝুমুর আলোচনা ও সংগ্রহঃ সনৎকুমার মিত্র (সম্পাদিত); পুস্তক বিপণি, ১৯৯৮, পৃ-১০)
সাঁওতালি রামায়ণমূলক গানগুলি পাঠ করলে দেখা যায় রামায়ণের একটি বিশেষ অংশ তাদের আকর্ষণ করেছে। রাম-সীতার গভীর দাম্পত্য প্রণয়, গোদাবরীর তীরে পঞ্চবটীতে পর্ণকুটীর নির্মাণ করে বসবাস, রাবণের সীতাহরণ ও সীতার উদ্ধার এই সব কাহিনীই তাদের গানের বিষয় হয়েছে। আরণ্যক সাঁওতালেরা রাম-সীতার অরণ্যজীবনের নানা ঘটনাকেই বেশি করে পছন্দ করেছে। হয়ত তাদের জীবনের সঙ্গে এর মিল ছিল বলেই। আর রাম-সীতার দাম্পত্য প্রেমের আদর্শও বোধহয় তাদের প্রভাবিত করেছিল। এই সেরেঞগুলির মাধ্যমে বিয়ের পর বর যাতে কনেকে নিয়ে সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করতে পারে এবং হঠকারিতার ফলে যাতে সে কন্যাকে হারিয়ে না ফেলে তার জন্য নতুন বরকে সাবধান করে দেওয়া হয়। এছাড়া নববধূকে অনেক সময় সীতারানির সঙ্গে তুলনা দেওয়া হয়েছে। একটি গানে পাওয়া যায় নতুন কনেটিকে সীতারানি সম্বোধন
করে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে সে কেন কাঁদছে-

উল বুটৗ জজ বুটৗ

চাতম্ সীতারানিম্ জাপা বাড়ায়।


বঙ্গানুবাদ

আমগাছের তলায় তেঁতুলগাছের তলায়
কেন সীতারানি কেঁদে বেড়াচ্ছ?

সাঁওতালি সমাজে যে রামায়ণের প্রভাব ছিল সেকথা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বেশির ভাগ সাঁওতাল-গ্রামেই খুঁজে পাওয়া যাবে রামদাস, রামচাঁদ, কানুরামদের। সাঁওতালি সেরেঞেও রামায়ণের এই প্রভাব কাজ করেছে। বিষয়টি গবেষণাযোগ্য বলে মনে হয়।




Share this Post with Friends

Previous Post Next Post
No one Has Commented On this Post yet
Click here to comment

Every comment is reviewed

comment url